ইসরায়েলের ভূগর্ভস্থ কারাগারে বন্দিদের ভয়ানক নির্যাতন

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

ইসরায়েলের ভয়ানক কারাগারগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘রাকেফেট কারাগার’। এটি মূলত সামারিক বন্দিদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এখানে বন্দিদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ভূগর্ভস্থ কারাগারটিতে কোনো প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের উৎস পর্যন্ত নেই। কারাগারে প্রবেশের পর বন্দিদের শ্বাসকষ্ট হয়। তাদের খাবার দেওয়া হয় না। এমনকি বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে, তাও জানতে দেওয়া হয় না। গতকাল শনিবার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

রাকেফেটে বর্তমানে ১০০ জনের মতো বন্দি রয়েছে। তবে এখন এতে বেসামরিক বন্দিও রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন ইসরায়েলের পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন বা পিসিএটিআইর আইনজীবীরা।

পিসিএটিআইর তথ্যমতে, কারাগারটিতে বর্তমানে দুজন বেসামরিক লোককে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছে। তাদের একজন পুরুষ নার্স (৩৪) এবং অন্যজন তরুণ খাদ্য বিক্রেতা (১৮)। গত জানুয়ারিতে তাদের এই কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। পিসিএটিআইর আইনজীবীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। তারা কারাগারটিতে বন্দি নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন।

কারাগারটি ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধীদের রাখার জন্য খোলা হয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ ওঠায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলার পর পুনরায় চালু করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে পিসিএটিআইর আইনজীবীরা কারাগারটির ওই দুই বেসামরিক বন্দির সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন।

ভয়ানক নির্যাতনের অপর নাম রাকেফেট 
এই গ্রীষ্মে পিসিএটিআই আইনজীবীদের ভূগর্ভস্থ কারাগারটিতে আটক ওই দুই ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করতে বলা হয়েছিল। আইনজীবী আবদু এবং তাঁর সহকর্মী মিশেরকি বারানসি প্রথমবারের মতো সেখানে যেতে সক্ষম হন। পিসিএটিআইর নির্বাহী পরিচালক তাল স্টেইনার বলেন, কারাগারটিতে বন্দিকে মাসের পর মাস ধরে দিনের আলো ছাড়াই মাটির নিচে আটকে রাখা হয়, যা বন্দির মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। যেখানে ২৪ ঘণ্টা মাটির নিচে আটকে থাকা যে কোনো বন্দির পক্ষে অক্ষত থাকা খুব কঠিন।

ওই দুই আইনজীবীকে যারা ভূগর্ভস্থ কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল, তারা মুখোশধারী ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত নিরাপত্তারক্ষী ছিল। নোংরা সিঁড়ি বেয়ে তাদের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে মেঝেতে মৃত পোকামাকড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। টয়লেট এতটাই নোংরা ছিল, কার্যত তা ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।

আইনজীবীরা যখন দুই বন্দির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও দেয়ালে নজরদারি ক্যামেরা চালু ছিল। রক্ষীরা তাদের সতর্ক করে দেয়, কথাবার্তায় গাজার বিষয়টি এলেই সবকিছু বন্ধ। আবদু বলেন, আইনজীবীদের কক্ষের অবস্থা যদি এত ভয়ানক হয়, তাহলে বন্দিদের কক্ষের পরিবেশ কেমন, তা বুঝতে বাকি থাকে না। 

লেলিয়ে দেওয়া হয় হিংস্র কুকুর 
আইনজীবীদের সঙ্গে যখন দুই বন্দির সাক্ষাৎ হলো, তখন তাদের শিকলে বাঁধা শরীর কুঁকড়ানো অবস্থায় ছিল। রক্ষীরা তাদের মাথা মাটিতে ঠেসে ধরেছিল। পিসিএটিআইর আইনজীবী মিশেরকি বারানসি বলেন, দুই বন্দি ৯ মাস ধরে রাকেফেটে ছিলেন। আইনজীবীদের দেখতে পেয়ে বন্দি নার্স জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি কোথায় এবং কেন আমি এখানে।’ কিন্তু রক্ষীরা তাদের কারাগারের নাম বলেনি। 

বন্দিরা জানালাবিহীন কক্ষের বর্ণনা দেন, যেখানে কোনো বায়ু চলাচল নেই। একটি সংকীর্ণ কক্ষে চার বন্দিকে রাখা হয়। তাদের সবারই শ্বাসকষ্ট হয়। বন্দিদের নিয়মিত নির্মম শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। প্রতিদিন মারধর করা হয়। হিংস্র কুকুর তাদের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়। আহতদের চিকিৎসা হয় না। ওই নার্স শেষবারের মতো সূর্যের আলো দেখেন এ বছরের ২১ জানুয়ারি। অন্য বন্দি আবদুকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কি নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছে? তখন প্রহরী তাকে হুমকি দেয় এবং তৎক্ষণাৎ কথোপকথন বন্ধ করে দেয়।


আমার বার্তা/জেএইচ